Dedicated to the Protection and Promotion of Human Rights Helpline Number : +880 197 718 2023

Core Employees

Binoy Krishna Mallick

Executive Director

মানবাধিকার সংগঠন রাইটস যশোর এর নির্বাহী পরিচালক বিনয় কৃষ্ণ মল্লিক এর জন্ম ১৯৫৭ সালের ১ ডিসেম্বর মাাদারীপুর জেলার তৎকালীন কালকীনি বর্তমানে ডাসার থানাধীন নবগ্রামে। বাবা স্বর্গীয় গয়ালী মল্লিক এবং মা সুখী রানী মল্লিকের একমাত্র সন্তান বিনয় কৃষ্ণ মল্লিকের শিক্ষায় হাতেখড়ি গ্রামের স্কুলে। এরপর হাতেম আলী কলেজ হয়ে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় থেকে রাষ্ট্রবিজ্ঞানে অনার্স করেছেন তিনি। ছোটকাল থেকেই মানুষের সাথে থাকা এবং মানুষের অধিকারের পক্ষে থাকা বিনয় কৃষ্ণ মল্লিক মানবাধিকার আন্দোলনের সাথে জড়িয়ে পড়েন ১৯৭৬ সালে এলাকার একটি ভূমিহীন আন্দোলনের নেতৃত্ব দিয়ে। তার হাতে তৈরি ভূমিহীন পুনর্বাসন ও উন্নয়ন সংস্থা (বর্তমান নাম বহুমুখি উন্নয়ন সংস্থা) এলাকার ভূমিহীনদের পক্ষে ব্যাপক আন্দোলন সংগ্রাম গড়ে তুলে তাদের অধিকার আদায়ে অগ্রণী ভূমিকা পালন করে। এই আন্দোলনে নেতৃত্বের সুবাদে Coor (বর্তমানে কারিতাস)-এর তৎকালীন কান্ট্রি ডিরেক্টর পল গুডার সাথে পরিচয় এবং Coor এর তদন্ত দলে যোগদান।

পড়াশোনা শেষ করে তিনি ১৯৮১ সাল থেকে যশোরে ব্যবসায় শুরু করেন। তা সত্তেও মানবাধিকারের প্রতি মনের ভেতরের তাড়না তাকে সুস্থির থাকতে দেয়নি। এরই অংশ হিসেবে তিনি জড়িয়ে পড়েন বাংলাদেশ মানবাধিকার কমিশন, টিএফটির মতো সংগঠনের সাথে। টিএফটির হয়ে পুলিশি নির্যাতনসহ নানা মানবাধিকার লংঘনের ঘটনায় তদন্ত করতে ঘুরে বেড়িয়েছেন দেশের এক প্রান্ত থেকে আর এক প্রান্তে। ১৯৯২ সালে তারা প্রতিষ্ঠিত করেন মানবাধিকার সংগঠন রাইটস যশোর। যার নির্বাহী পরিচালক হিসেবে তিনি দীর্ঘদিন থেকে দায়িত্ব পালন করে আসছেন। বিনয় কৃষ্ণ মল্লিকের নেতৃত্বে রাইটস যশোর মানবাধিকার সংগঠন হিসেবে দেশ ও বিদেশে ব্যাপক পরিচিতি লাভ করেছে।

মানবাধিকার আন্দোলন ছাড়াও একজন সাংবাদিক হিসেবে বিনয় কৃষ্ণ মল্লিক ব্যাপকভাবে পরিচিত। তাঁর প্রকাশনা ও সম্পাদনায় দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলে প্রথম আধুনিক প্রযুক্তিতে সংবাদপত্র ‘দৈনিক টেলিগ্রাম’ প্রকাশিত হয়। একজন সাংবাদিক নেতা হিসেবেও তিনি দীর্ঘদিন যশোর জেলার সাংবাদিক তথা সংবাদপত্রসেবীদের আন্দোলন-সংগ্রামে অগ্রণী ভূমিকা পালন করেছেন। তিনি প্রেসক্লাব যশোরের কার্যনির্বাহী কমিটিতে ভারপ্রাপ্ত সভাপতি হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছেন। একাধিক কমিটিতে সহসভাপতিও ছিলেন।

বিনয় কৃষ্ণ মল্লিক মানবতাবাদী, অসাম্প্রদায়িক এবং মহান মুক্তিযুদ্ধের চেতনা লালনকারী। মানবতার ধর্মই তার প্রকৃত ধর্ম। নিজ গুন ও কর্মদক্ষতায় সাধারণ মানুষের খুব কাছের হিসেবে নিজেকে প্রতিষ্ঠিত করে তুলেছেন তিনি। ছিলেন বাংলাদেশ মানবাধিকার সমন্বয় পরিষদের সভাপতি। দীর্ঘদিন থেকে বাংলাদেশ শিশু অধিকার ফোরামের কার্যনির্বাহী কমিটির সদস্য হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন। বর্তমানে দুর্নীতি প্রতিরোধ কমিটি (দুপ্রক) যশোর জেলা কমিটির সাধারণ সম্পাদক। এছাড়া তিনি জাতীয় শিশু-কিশোর সংগঠন চাঁদের হাট যশোর জেলা কমিটির উপদেষ্ঠামন্ডলীর সদস্য, দেশের বেসরকারি পর্যায়ে বৃহত্তর ও ঐতিহ্যবাহী প্রতিষ্ঠান যশোর ইনস্টিটিউটের জীবন সদস্য, যশোর শিল্পকলা একাডেমির জীবন সদস্য। যশোর জেলা আইনশৃঙ্খলা কমিটিসহ অসংখ্য সামাজিক-সাংস্কৃতিক সংগঠনের সাথেও যুক্ত আছেন তিনি। তিনি স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের অধীন জিও-এনজিও কোঅর্ডিশেন কমিটি এবং আইন ও বিচার বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের লিগ্যাল এইড কমিটির সক্রিয় সদস্য হিসেবে ভূমিকা পালন করছেন। মানব পাচার প্রতিরোধ ও নিরাপদ অভিবাসন সুনিশ্চিতকরণে বিনয় কৃষ্ণ মল্লিক রাইটস যশোরকে তৃণমূল থেকে জাতীয় পর্যায়ে সক্রিয় রেখেছেন। তিনি মানব পাচার প্রতিরোধে সরকারের আরআরআরআই টাস্কফোর্সের একজন সক্রিয় সদস্য। মানব পাচার প্রতিরোধ ও নিরাপদ অভিবাসন সুনিশ্চিতকরণে তিনি তৃণমূল থেকে পাওয়া তথ্য, অভিজ্ঞতা ও সুপারিশসমূহ জাতীয় পর্যায়ে উত্থাপন করতে সবসময় সক্রিয়। এসব বিষয়ে সরকারের নীতিনির্ধারণী পর্যায়েও তিনি এডভোকেসি করে থাকেন। যার প্রতিফলন দেখা যায় ‘মানব পাচার প্রতিরোধ ও দমন আইন ২০১২’তে। জাতীয় মানবাধিকার কমিশন-এর নানা কার্যক্রমের সাথেও নিজেকে নিয়োজিত রেখেছেন তিনি। মানবাধিকার রক্ষা ও সমুন্নত রাখায় বিনয় কৃষ্ণ মল্লিকের আন্তরিকতা ও নিবেদনের কারণে জাতীয় মানবাধিকার কমিশন তাকে দিয়ে যশোরসহ দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের অনেক গুরুত্বপূর্ণ মানবাধিকার লংঘনজনিত ঘটনার তদন্ত করিয়েছে। তিনি ও তাঁর টিম নিরপেক্ষ তদন্তের মাধ্যমে অনেক নীরিহ মানুষকে মিথ্যা, ষড়যন্ত্রমূলক মামলা বা অভিযোগ থেকে যেমন নিষ্কৃতি দিতে ভূমিকা রেখেছেন তেমনি নির্যাতন/নীপিড়নের শিকার অনেক মানুষ সুবিচার লাভ করেছেন। তিনি জাতীয় পর্যায়ে আরও যেসব সংগঠনের সাথে যুক্ত থেকে সক্রিয় ভূমিকা রাখছেন তার মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলো মাইগ্রেশন ডেভলপমেন্ট ফোরাম, বাংলাদেশ শিশু অধিকার ফোরাম এবং রাইট টু ফুড। এই মানুষটির কাছে ধর্ম-বর্ণ-জাত-পাতের কোন ভেদাভেদ নেই। যে কোন মানুষ নিজেদের সমস্যা নিয়ে তার কাছে আসার পর বিমুখ হয়ে ফিরে গেছেন-এমন নজির নেই। রাত-দিনের তোয়াক্কা না করে ঘটনার গুরুত্ব বিবেচনায় ছুটে যান প্রত্যন্ত অঞ্চলে। নিজেই মানুষের মুখ থেকে শোনেন তাদের সমস্যার কথা। পরবর্তীতে সেই অনুযায়ী ব্যবস্থা নিয়ে থাকেন। তার ঐকান্তিক প্রচেষ্টায় যশোর ছাড়াও বিভিন্ন স্থানে একাধিক সামাজিক, সাংষ্কৃতিক ও ধর্মীয় প্রতিষ্ঠান সক্রিয় ভূমিকা পালন করছে আর্তমানবতার সেবায়।

মানবাধিকার আন্দোলনে নিবেদিত বিনয় কৃষ্ণ মল্লিকের জীবনে প্রতিবন্ধকতা কম আসেনি। প্রভাবশালীরা মানবতার জন্যে তার অগ্রযাত্রাকে থামিয়ে দিতে বার বার ষড়যন্ত্র করেছে। সেই ষড়যন্ত্রের অংশ হিসেবে যশোরের তৎকালীন পুলিশ সুপার আনিসুর রহমানের রোষানলে পড়েন তিনি। তাঁর বিরুদ্ধে মিথ্যা ও বানোয়াট অভিযোগ উত্থাপন করে দায়ের করা হয় একের পর এক মামলা। তাঁকে নিয়ন্ত্রণ করতে তাঁর পাশাপাশি পরিবারের সদস্যদের উপরও চাপানো হয়েছে দলন-পীড়ন। বড় ছেলে সবুজ মল্লিককে ২০১৭ সালের ৯ মার্চ নিজ ব্যবসা প্রতিষ্ঠান থেকে তুলে নিয়ে সাজানো মামলায় গ্রেপ্তার করে পুলিশ। তার উপর চালানো হয় শারীরিক ও মানসিক নির্যাতন। যশোর থেকে চোখ-মুখ বেঁধে সবুজ মল্লিককে তুলে নিয়ে গেলেও আটক দেখানো হয় খুলনা জেলার ফুলতলা উপজেলা এলাকা থেকে। এই ন্যাক্কারজনক ঘটনার প্রতিবাদে ওই বছরের ১৩ মার্চ প্রেসক্লাব যশোরে এক সংবাদ সম্মেলন করেছিলেনে বিনয় কৃষ্ণ মল্লিক। তিনি সেখানে জানিয়েছিলেন নিজের ও পরিবারের উপর পুলিশের আক্রোশের কারণ। তিনি বলেছিলেন, যশোর শহরের গাড়িখানা সড়কে জেলা প্রশাসনের কাছ থেকে লিজ নিয়ে ব্যবসা পরিচালনাকারী দশজন ব্যবসায়ীকে অবৈধভাবে উচ্ছেদ করে পুলিশ। জেলা প্রশাসনের জায়গা হলেও ওটাকে পুলিশের জায়গা দাবি করে তারা। জেলা প্রশাসনের এই জায়গা নিজেদের নিয়ন্ত্রণে নিতে পুলিশ অবৈধভাবে ব্যবসায়ীদের উচ্ছেদ করে পথে বসায়। উচ্ছেদকারীদের মধ্যে সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের কয়েকজন ব্যবসায়ীও রয়েছেন। তারা নানা স্থানে ধর্ণা দিয়েও কোনো প্রতিকার পাননি। চরম এই মানবাধিকার লংঘনের বিরুদ্ধে ক্ষতিগ্রস্তদের পাশে দাঁড়ান তিনি। তিনি জায়গা পুনরুদ্ধারের আন্দোলন শুরু করেন। এ কারণে তার উপর ক্ষিপ্ত হয়ে ওঠেন তৎকালীন পুলিশ সুপার আনিসুর রহমান। পুলিশের এই কর্মকর্তা তাঁকে শায়েস্তা করতেই ছেলে সবুজ মল্লিককে ষড়যন্ত্রমূলকভাবে উঠিয়ে নিয়ে সাজানো মামলায় প্রেপ্তার করে বলে ওই সংবাদ সম্মেলনে দাবি করেন বিনয় কৃষ্ণ মল্লিক। ওই সংবাদ সম্মেলনে তিনি ছেলের মুক্তি দাবি করেছিলেন এবং পুলিশকে দলননীতি পরিহার করে গাড়িখানা সড়কের ক্ষতিগ্রস্ত ব্যবসায়ীদেরকে পুনর্বাসনের দাবি জানিয়েছিলেন।

ওই সংবাদ সম্মেলনের দিন সন্ধ্যায়ই সশস্ত্র পুলিশ নিজ বাসা থেকে হেটে হিঁচড়ে বের করে নিয়ে যায় বিনয় কৃষ্ণ মল্লিককে। পরবর্তীতে বিনয় কৃষ্ণ মল্লিককে মানুষের অধিকার আদায়ের পক্ষ থেকে সরাতে না পেরে পুলিশ ক্লাবে নিজেদের লোক দিয়ে বোমার বিস্ফোরণ ঘটিয়ে সেই মামলায় সবুজ মল্লিককে আসামি করে। বিনয় কৃষ্ণ মল্লিককে আটকের পর পুলিশ তাঁর বিরুদ্ধে নরসিংদির শিবপুর থানায় ষড়যন্ত্রমূলকভাবে একটি মামলাও দেয়। ওই মামলায় পুলিশ যাকে বাদী হতে বাধ্য করেছিল তিনি ইরাকে পাচারের শিকার হয়েছিলেন। ওই ব্যক্তির পরিবার রাইটস যশোরের সাথে যোগাযোগ করার পর বিনয় কৃষ্ণ মল্লিকের ঐকান্তিক প্রচেষ্টায় তিনি দেশে ফিরে আসতে সক্ষম হন। যে রিক্রুটিং এজেন্সি ওই ছেলেকে পাচার করেছিল তাদেরকে দিয়েও বিনয় কৃষ্ণ মল্লিকের বিরুদ্ধে উল্টো মামলা দায়ের করিয়েছিল ঢাকাতে।

২০১৭ সালের ১৩ মার্চ আটকের পর পুলিশ বিনয় কৃষ্ণ মল্লিককে অজ্ঞাত স্থানে আটকে রাখে। পরিবারসহ সমাজের বিবেকবান মানুষ তার জীবনাশংকায় পড়েন। এরূপ পরিস্থিতিতে প্রেসক্লাব যশোরের নেতৃত্বে স্থানীয় সাংবাদিকেরা সোচ্চার হয়ে ওঠেন। তারা ওই রাতে প্রেসক্লাব যশোরে জরুরি সভা করে বিনয় কৃষ্ণ মল্লিকের মুক্তির দাবিতে প্রশাসনকে আলটিমেটাম দেন। ওই রাতেই তাকে জনসমুক্ষে আনারও দাবি করেন সাংবাদিকেরা। তারা পুলিশের পক্ষ থেকে বিবৃতি দাবি করে বলেন, তাকে কেনো আটক করা হয়েছে এবং তাকে কোথায় রাখা হয়েছে তাও জানতে চান। রাত ১২টার দিকে যশোরের প্রায় সকল সাংবাদিক একযোগে হাজির হন যশোর পুলিশ লাইনের প্রধান ফটকের সামনে। তারা সোচ্চার আওয়াজ তোলেন মানবাধিকার আন্দোলনের নেতা বিনয় কৃষ্ণ মল্লিককে একটিবারের জন্যে দেখানো হোক। তাকে যে আটক করা হয়েছে তা স্বীকার করুক পুলিশ। একইসাথে সাংবাদিকেরা তার মুক্তির দাবিতে মুহুর্মুহু স্লোগান দিতে থাকেন। এরই এক পর্যায়ে গভীর রাতে বিধ্বস্ত, আতঙ্কগ্রস্ত বিনয় কৃষ্ণ মল্লিককে একটি মাইক্রোবাসে করে পুলিশ লাইনের গেটে নিয়ে আসা হয়। সাংবাদিকেরা ফের স্লোগানে প্রকম্পিত করেন পুলিশ লাইন এলাকা। তারা বিনয় কৃষ্ণ মল্লিকের মুক্তির দাবি জানান। ওই ঘটনার দুইদিন পর যশোরে তৎকালীন স্বরাষ্টমন্ত্রীর একটি সরকারি কর্মসূচি ছিল। যশোরের সাংবাদিকেরা দাবি উত্থাপন করে বলেন, বিনয় কৃষ্ণ মল্লিককে মুক্তি না দিলে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর সেই কর্মসূচি বর্জন করা হবে। একইসাথে সরকারের অন্যান্য কর্মসূচিও বর্জন করা হবে। যশোরে সাংবাদিকদের পাশাপাশি দেশের শীর্ষস্থানীয় মানবাধিকার ব্যক্তিত্ব ও সংগঠনের পক্ষ থেকেও বারবার পরিস্থিতি সম্পর্কে খোঁজখবর নেওয়া হয়। দেশি ও বিদেশি সংস্থাগুলোর কর্মকর্তারা বিষয়টি নিয়ে সরকারের নানা পর্যায়ে কথা বলে বিনয় কৃষ্ণ মল্লিকের মুক্তি দাবি করেন এবং তার প্রতি কোনো প্রকার অন্যায় ও অবিচার যেনো না হয় তা নিশ্চিত করতে চাপ প্রয়োগ করেন। সার্বিক পরিস্থিতি বুঝতে পেরে পুলিশ সুপার আনিসুর রহমানের নির্দেশে ওই রাতেই বিনয় কৃষ্ণ মল্লিককে শিবপুর থানায় সেই সাজানো মামলা দিয়ে পাঠিয়ে দেওয়া হয় নরসিংদিতে। পরদিন যশোরের সাংবাদিকেরা জেলা প্রশাসকের অফিসের দরজার সামনে ধর্ণায় বসেন। সাংবাদিকেরা দাবি তুলতে থাকেন তাকে যতক্ষণ মুক্তি না দেওয়া হবে ততক্ষণ ওই স্থান ত্যাগ করা হবে না। এক পর্যায়ে প্রশাসনের পক্ষ থেকে আশ্বস্ত করে বলা হয়, যেহেতু তাকে মামলায় চালান দেওয়া হয়েছে সেহেতু তাকে আদালত থেকে জামিন নিতে হবে। তবে, পুলিশের পক্ষ থেকে ওই জামিনে কোনো বিরোধিতা করা হবে না। সে অনুযায়ী বিনয় কৃষ্ণ মল্লিক নরসিংদির আদালত থেকে জামিনে মুক্তি লাভ করেন। তবে, তার বিরুদ্ধে পুলিশের দায়ের করা মামলা আদালতে মিথ্যা প্রমাণ করেই তাকে মুক্ত হতে হয়েছে। পুলিশ ওই সময় বিনয় কৃষ্ণ মল্লিককে হয়রানি করার উদ্দেশ্যে তার বিরুদ্ধে দেশের বিভিন্ন স্থানে আরও যে মামলাগুলো করিয়েছিল তার প্রত্যেকটিই তিনি আদালতে নির্দোষ প্রমাণিত হয়েছেন।

এভাবে একের পর এক আইনি বেড়াজালে আটকাতে চেষ্টা করা হয়েছে মানবাধিকার আন্দোলনে নিবেদিত বিনয় কৃষ্ণ মল্লিককে। কিন্তু, সত্য ও ন্যায়ের প্রতি অবিচল আস্থাশীল থেকে তিনি পুলিশের অন্যায়, জেল, জুলুমের কাছে মাথা নত করেননি। প্রতিবারই তিনি সোজা হয়ে দাঁড়িয়েছেন। প্রতিটি আঘাতকে প্রতিহত করেছেন।

পুলিশের পাশাপাশি সমাজের প্রভাবশালী নানা পক্ষ থেকেও বিনয় কৃষ্ণ মল্লিককে নানাভাবে হয়রানি করা হয়েছে। হত্যার হুমকি দেওয়া হয়েছে। দেখানো হয়েছে নানা প্রলোভনও। তাতেও নিজের অভিষ্ট লক্ষ্য থেকে সরানো যায়নি তাঁকে। তিনি প্রতিবারই সকল ষড়যন্ত্রের জাল ছিন্ন করে বেরিয়ে এসে সামিল হয়েছেন মানবতার মুক্তির মিছিলে।

কাজের স্বীকৃতি হিসেবে বিনয় কৃষ্ণ মল্লিক দেশি-বিদেশি নানা পুরস্কারে ভূষিত হয়েছেন। এরমধ্যে উল্লেখযোগ্য ‘আরব গালফ প্রোগ্রাম ফর ইউনাইটেড নেশনস ডেভলপমেন্ট অর্গানাইজেশনস-আগফান্ড (Arab Gulf Programme for United Nations Development Organisations-AGFUND). মানব পাচার প্রতিরোধে ব্যক্তিগত উদ্যোগ পর্যায়ে কমিউনিটি মবিলাইজেশন টু কমব্যাট ট্রাফিকিং বা সিএমসিটি (Community Mobilization to Combat Trafficking-CMCT) প্রকল্পের জন্যে তিনি ২০০৭ সালে এই পুরস্কার অর্জন করেছিলেন। তার ঐকান্তিক প্রচেষ্টায় সিএমসিটি প্রকল্পের অধীনে তৃণমূল পর্যায়ে ‘মানব পাচার প্রতিরোধে নারী ফোরাম-সিটিডাব্লিউএফ (Counter Trafficking Women Forum-CTWF)’ গঠিত হয়। এই কমিটির ১৫ জন সদস্যই নারী। যাদের মধ্যে রয়েছেন ইউনিয়ন পরিষদের তিনজন মেম্বার, তিনজন শিক্ষক, তিনজন আনসার সদস্য, তিনজন সমাজসেবী এবং তিনজন ছাত্রী। কমিটির সদস্যদেরকে মানব পাচার বিষয়ে সচেতন ও পাচার প্রতিরোধ কার্যক্রম পরিচালনায় প্রয়োজনীয় প্রশিক্ষণ প্রদানের মাধ্যমে দক্ষ করে তোলা হয়। পরবর্তীতে তারা তৃণমূল পর্যায়ে উঠান বৈঠক, স্কুল ওরিয়েন্টেশন, পথনাটক, জারিগান ইত্যাদি অনুষ্ঠানের মাধ্যমে সাধারণ মানুষকে পাচার বিষয়ে সচেতন করে তোলার কর্মসূচিগুলো সফলভাবে আয়োজন ও পরিচালনা করেন। এছাড়া, সিটিডাব্লিউএফ সদস্যরা সমাজে ওয়াচডগ হিসেবে ভূমিকা পালন করেন। পাচারের শিকার ব্যক্তিদের উদ্ধার ও পুনর্বাসনে কমিটির সদস্যরা রাইটস যশোরের হটলাইন ব্যবহার, ইউনিয়ন পরিষদ এবং অন্যান্য সেবাদানকারী সরকারি-বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের সাথে কোলাবরেশন গড়ে তোলেন। যার ফলশ্রুতিতে প্রকল্প এলাকায় মানব পাচারের সংখ্যা তুলনামূলক অনেক কমে আসে। এটি দেশি ও আন্তর্জাতিক পর্যায়ে ব্যাপকভাবে প্রশংসিত হয়। সার্বিক এই কার্যক্রম পরিচালনায় অসামান্য দক্ষতার পরিচয় দেওয়ায় বিনয় কৃষ্ণ মল্লিক আগফান্ড পুরস্কারে ভূষিত হন। তিনি ২০০৮ সালে ২১ এপ্রিল আর্জেন্টিনার রাজধানী বুয়েনআয়ার্সে আগফান্ডের তৎকালীন প্রেসিডেন্ট প্রিন্স তুর্কি বিন তালালের হাত থেকে পুরস্কারটি গ্রহণ করেছিলেন।

তিনি ডেনমার্কে ওই দেশের সরকার থেকে পাওয়া প্রকল্প ম্যানেজমেন্টের উপর তিন মাসের ফেলোশিপ সম্পন্ন করেছেন। এছাড়া, তিনি বিআরসিটি অ্যাওয়ার্ড ২০০০, চাঁদেরহাট সম্মাননা ২০০৮ লাভ করেন। তিনি আইওএম, ইউএসএআইডি, জেলা প্রশাসন ও সমাজসেবা অধিদপ্তর, একাডেমি ফর এডুকেশনাল ডেভলপমেন্ট-এইডি ইউএসএআইডি, ভারতের ওয়েস্টবেঙ্গল লিগ্যাল এইড সার্ভিস, মুম্বাইয়ের ইন্টারন্যাশনাল জাস্টিস মিশন, গোয়ার অন্যায় রোহিত জিন্দেগি-এআরজেড থেকেও তিনি সম্মাননায় ভূষিত হয়েছেন। বাল্যবিবাহ প্রতিরোধে অসামান্য অবদানের স্বীকৃতি হিসেবে যশোরের জেলা প্রশাসন তাঁকে বিশেষ সম্মাননায় ভূষিত করে। মানবাধিকার সংক্রান্ত কাজে তিনি ঘুরে বেড়িয়েছেন পৃথিবীর নানা দেশ। এগুলোর মধ্যে অন্যতম হলো থাইল্যান্ড, ডেনমার্ক, মালয়েশিয়া, সুইডেন, স্পেন, জার্মানি, ফ্রান্স, নরওয়ে, শ্রীলংকা, নেপাল, ব্রাজিল, আর্জেন্টিনা, ভারত, ইরান ও আরব আমিরাত। তিনি প্রকল্প ম্যানেজমেন্টের উপর ডেনমার্ক থেকে ৩ মাসের একটি ফেলোশিপ সম্পন্ন করেছেন।